ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন ওয়াইক্লিফ-এর ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন ওয়াইক্লিফ-এর ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

অথবা, কাকে, কেন ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ বলা হয়

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন ওয়াইক্লিফ-এর ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিকাশে জন ওয়াইক্লিফ-এর ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে সাড়া জাগানো ধর্মসংস্কার আন্দোলনের নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার। তবে তাঁর আগে থেকেই কয়েকজন নামী-অনামী, খ্যাত বা স্বল্পখ্যাত ধর্মীয় নেতা চার্চ ও যাজকদের  ব্যাপক দুর্নীতি, অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। ইউরোপের প্রায় সর্বত্রই প্রথাগত ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কয়েক শতক আগে থেকেই জন্ম নিয়েছিল যাজকবিরোধী মানসিকতা, যা প্রকট হয়ে উঠেছিল বেশকিছু স্থানীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ঐতিহাসিকেরা একে ‘Anticlericalism’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। দশম শতকে ক্লুনি মঠের অ্যাবট সেন্ট বার্নো (St. Berno, অ্যাবট পদের সময়কাল ৯০৯/৯১৯-৯২৭ খ্রি.) ও সেন্ট ওডো (St. Odo, অ্যাবট পদের সময়কাল ৯২৭-৯৪২ খ্রি.) ক্যাথলিক চার্চকে ত্রুটিমুক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। আবার ফ্রান্সের পিটার ওয়ালডো (Peter Waldo, ১১৪০-১২১৮ খ্রিস্টাব্দ)-ও ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর অনুগামীদের বলা হত ওয়ালডেনসিয়ান (Waldensians)। পরবর্তীতে জন ওয়াইক্লিফ, জন হাস, সাভোনারোলা, ইরাসমাস প্রমুখ সংস্কারক চার্চের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন। মার্টিন লুথারের  পূর্ববর্তী প্রতিবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন ইংল্যান্ডের  অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন ওয়াইক্লিফ (John Wycliffe, আনুমানিক ১৩২৮-১৩৮৪ খ্রিস্টাব্দ)। তাঁকে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের  শুকতারা (Morning Star of Reformation) নামে অভিহিত করা হয়।

ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের ভূমিকা

(1) ওয়াইক্লিফের মতবাদ: ১৩৭৮ খ্রিস্টাব্দে পোপ একাদশ গ্রেগরির (Pope Gregory XI) মৃত্যুর পর রোমান যাজকরা পরবর্তী পোপ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এই ঘটনা ওয়াইক্লিফকে পীড়িত করে। এ ছাড়া পোপ ও যাজকদের অর্থলিপ্সা, নীতিভ্রষ্টতা ইত্যাদিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ঘোষণা করেন যে, চার্চ যদি অনাচারের দায়ে অভিযুক্ত হয়, তাহলে রাষ্ট্র তাকে লুণ্ঠন করতে পারে। তিনি বলেন, যে পোপ ব্যক্তিগত জীবনে খ্রিস্টের অপাপবিদ্ধ জীবনদর্শন প্রতিফলিত করতে পারেন না; তিনি খ্রিস্টবিরোধী (anti-christ), সেন্ট পিটারের পবিত্র আসনে তাঁর বসার অধিকার নেই।

(2) আন্দোলন পরিচালনা: ওয়াইক্লিফ বিশ্বাস করতেন যে, খ্রিস্ট ধর্মের পরম সত্য একমাত্র বাইবেলে বিধৃত আছে। তিনি ধর্মসংস্কার আন্দোলন পরিচালনার একেবারে প্রাথমিক পর্বে খ্রিস্ট ধর্মের মূলকথা সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্য ইংরেজি ভাষায় পবিত্র বাইবেল-এর অনুবাদ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া খ্রিস্টানদের আত্মশুদ্ধির কাজ করার জন্য তিনি গ্রামীণ যাজকদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। তাঁর অনুগামীরা লোলার্ড (Lollards) নামে অভিহিত হতেন।

(3) প্রতিক্রিয়া: জন ওয়াইক্লিফের মতাদর্শ এবং তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ পোপ ও গোঁড়া ক্যাথলিকপন্থীদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ধর্মদ্রোহিতার নামে তাঁর অনুগামীদের অনেককে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করা হয়। ওয়াইক্লিফ অবশ্য এই শাস্তি থেকে রেহাই পান। তবে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যুর পর তাঁকেও হেরেটিক বা ধর্মদ্রোহী হিসেবে অগ্নিদগ্ধ করার প্রহসন করা হয়। বর্বরোচিত দমনপীড়নের মাধ্যমে জন ওয়াইক্লিফের নেতৃত্বে পরিচালিত ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর প্রতিবাদের গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য। ওয়াইক্লিফের প্রচারিত মত প্রায় দুশো বছর ধরে ইংল্যান্ডের নিম্নবর্গের মানুষদের মধ্যে টিকে ছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment