ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাবসমূহ আলোচনা করো
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাবসমূহ
ধর্মসংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ফলাফলগুলি হল-
(1) পোদের শোষণের অবসান: আলোচ্য পর্বে ধর্মকর-সহ অন্যান্য কর আদায়ের মাধ্যমে পোপ দরিদ্র জনগণকে যেভাবে শোষণ করত, ধর্মসংস্কার আন্দোলন তার অবসান ঘটায়। চার্চের অধীনস্থ বিশাল সম্পত্তি রাষ্ট্র অধিকার করে নেয় এবং জনগণের উন্নতির লক্ষ্যে তা ব্যবহৃত হয়।
(2) শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতি: ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূত্রে বিভিন্ন দেশে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের প্রসার ঘটে। এইসব স্থানে প্রোটেস্ট্যান্ট মতাবলম্বীরা কৃষি অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে শিল্প ও বাণিজ্যের অগ্রগতি সাধনে উদ্যমী হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশগুলি আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকে।
(3) পুজিবাদের উত্থানের সহায়ক: মার্টিন লুথার ঘোষণা করেছিলেন যে একজন বিশ্বাসী মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা। লুথার কর্তৃক প্রবর্তিত এই ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ধারণা পুঁজিবাদের উত্থানের সহায়ক হয়েছিল বলে অনেক গবেষক মনে করেন। ফ্রেডরিক এঙ্গেলস (Friedrich Engels)-এর মতে, প্রোটেস্ট্যান্ট আদর্শের মধ্যেই উদীয়মান পুঁজিপতিরা নতুন সম্ভাবনা লক্ষ করেছিলেন। ক্যাথলিকরা আসলে যে-কোনোরকম পুঁজির বিনিয়োগকে পাপ কাজ বলে মনে করতেন। কিন্তু ধর্মসংস্কার আন্দোলন ইউরোপীয় অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় মুনাফার মানসিকতা নিয়ে আসে। তাই বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) উল্লেখ করেছেন যে প্রথমদিকের প্রোটেস্ট্যান্ট, বিশেষত ক্যালভিনপন্থীরা পুঁজিবাদের বিকাশে যথেষ্ট অবদান রেখেছিলেন। তবে এই মতগুলি বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ অনেক বিশেষজ্ঞরাই প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের সঙ্গে পুঁজিবাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর