খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ভক্তিবাদের উত্থান বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ভক্তিবাদের উত্থান
খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় নবম শতকে দক্ষিণ ভারতে পল্লব বংশের রাজত্বকাল ছিল ‘হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের যুগ’। এই সময় অল্প ও বিলম্বিত হলেও দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মের দ্বারা আর্য সভ্যতার ধর্মীয় আদর্শের প্রসার ঘটে। পল্লব রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অংশে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে বহু হিন্দু মঠ ও মন্দির। এই মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করেই হিন্দুদের ধর্মাচরণ নতুন গণভিত্তি লাভ করেছিল। সুগম হয়েছিল ভক্তিবাদের উত্থানের পথ।
(1) ভক্তিগীতি ও সাহিত্যের বিকাশ: আলোচ্য পর্বে দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদী গীত ও সাহিত্যের বিকাশ লক্ষ করা যায়। আসলে, পল্লব রাজারা ছিলেন শিব এবং বিষ্ণুর উপাসক। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই শৈব ও বৈঘ্নব ভক্তিসাহিত্যের উন্মেষ ঘটে। আদি তামিল সাহিত্যে প্রেম ও ভক্তিকেন্দ্রিক কাব্যসাহিত্যের প্রসার মানুষের মধ্যে ভক্তিবাদকে জনপ্রিয় করে তোলে। পাশাপাশি প্রণীত হয় তামিল ভক্তিগীতিও, যেগুলি ভক্তিবাদী সাধকদের প্রচেষ্টায় জনপ্রিয়তা পায়।
(2) আলবার ও নায়নার সাধকদের ভূমিকা: সপ্তম শতক নাগাদ বৈষুব ধর্মের অনুরাগী আলবার ও শৈব ধর্মানুরাগী নায়নার সাধকগণ প্রচার করতে থাকেন যে, ভগবানের সঙ্গে ভক্তের অতীন্দ্রিয় মিলনের একমাত্র পথ ও পন্থা হল ভক্তি। এই সকল সাধকদের উদ্দেশ্য ছিল, জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম থেকে মানুষকে সরিয়ে আনা এবং ‘সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতার’ আরাধনার প্রতি আকৃষ্ট করা। সহজবোধ্য তামিল ভাষায় এঁরা তাঁদের মতাদর্শ প্রচার করতেন। সরযোগী, মধুরকবি, নম্মাঢ় প্রমুখ আলবার এবং অপ্পর, সম্বন্দর, সুন্দররের ন্যায় নায়নার সাধকগণ দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদের প্রসারে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।
(3) বর্ণ ও জাতিভেদের বিরোধিতা: দক্ষিণ ভারতে ভক্তি সাধকদের অধিকাংশই ছিলেন নিম্নবর্ণের হিন্দু শ্রেণিভুক্ত। তাঁরা ভক্তি সাধনার দ্বারা সাধনার উচ্চমার্গে বিরাজ করেন। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বর্ণ ও জাতিভেদ প্রথাকে এইসব সাধকেরা মানতে পারেননি। এঁদের প্রচারিত ভক্তিবাদী আদর্শ সমাজের পতিত, অন্ত্যজ মানুষদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে মুক্তির আনন্দ।
তাৎপর্য
সুতরাং এইভাবেই দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সূচনা হয়েছিল ভক্তি আন্দোলনের। মূলত সপ্তম শতকের ভক্তিবাদই নতুন ভক্তিসাধনা এবং প্রাচীন ব্রাহ্মণ্য-বৈদিক কর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছিল। এই সময় আন্ডাল-এর মতো নারী সাধকরাও ভক্তি মতবাদের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর