ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল
ইউরোপের ইতিহাসে একাদশ শতক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে চার্চের সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি সংগ্রামী মনোভাব প্রচণ্ড হয়ে ওঠে। আধ্যাত্মিকতার শান্ত-স্নিগ্ধ পথ ছেড়ে চার্চ শক্তিপ্রয়োগে উদ্যত হয়। প্রার্থনা ও উপাসনার সঙ্গে মিশে যায় যুদ্ধের ভেরি ঘোষণা। খ্রিস্টানদের পবিত্র তীর্থস্থান জেরুজালেম মুসলমানদের হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পোপ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ডাক দেন।
ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা
(1) ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের আহ্বান: খ্রিস্টান জগতে রোমান চার্চের প্রাধান্যবিস্তার এবং বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার জন্য রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রতিনিধি হিসেবে পোপ দ্বিতীয় আরবান ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ক্লেরম বা ক্লেরমন্ট শহরে এক ধর্মসভা (Council of Clermont) আহ্বান করেন। তিনি পবিত্র তীর্থভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের লক্ষ্যে সকল স্তরের খ্রিস্টানদের ধর্মযুদ্ধে (ক্রুসেড) যোগদানের আহ্বান জানান। ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে হলেও নানা স্তর, নানা বৃত্তির খ্রিস্টান জনতা এই যুদ্ধে যোগ দেয়। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।
(2) সাধারণ মানুষের যোগদানের ক্ষেত্রে চার্চের ভূমিকা: পোপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সন্ন্যাসী পিটার দ্য হারমিট ক্রুশ দণ্ড হাতে নিয়ে জার্মানি, ইটালি ও ফ্রান্সের নানা স্থানে গিয়ে ধর্মযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। পরের বছর গ্রীষ্মাবসানে সন্ন্যাসী পিটার এবং ওয়াল্টার দ্য পেনিলেস-এর নেতৃত্বে দলে দলে মানুষ ধর্মযুদ্ধে অংশ নেয়।
(3) সম্রাটদের যোগদানের ক্ষেত্রে চার্চের ভূমিকা: পোপের আহ্বানে সংঘটিত আটটি ক্রুসেডের প্রথমটি বাদে প্রায় প্রত্যেকটিতেই কখনও দুজন আবার কখনও তিন জন শাসক একত্রে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পোপ চতুর্থ ইনোসেন্টের (Pope Innocent IV) আহ্বানে ফরাসিরাজ সপ্তম ক্রুসেডে যোগ দিলেও তা ব্যর্থ হয়। ফলে ফরাসিরাজ নবম লুই (Louis IX) নিজেই অষ্টম ক্রুসেড পরিচালনা করেন।
(4) চার্চের আকর্ষণীয় ঘোষণা: রোমান চার্চ তথা পোপ ঘোষণা করেছিলেন যে, ধর্মযুদ্ধে যোগদান করলে ভূমিদাসরা মুক্তি পাবে। ভবঘুরে ও বেকার যুবকদের জন্য ছিল কর্মসংস্থানের আশ্বাস। সমাজবিরোধী, ডাকাত, চোর ইত্যাদি শ্রেণির মানুষদের প্রাচ্যে স্বাধীন নাগরিক অধিকারের স্বপ্ন দেখানো হয়। তাছাড়া, যুদ্ধে যারা শহীদ হবে, তাদের জন্য স্বর্গলাভের মতো আশার বাণীও ঘোষিত হয়েছিল।
মন্তব্য
আলোচ্য পর্বে ক্ষমা-শান্তি-মৈত্রীর পথ ত্যাগ করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ক্ষমতাপ্রয়োগেই বেশি বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল রোমান চার্চ। এমনকি ধর্মগুরু পোপ অস্ত্র, যুদ্ধ, রক্তপাতের আশ্রয় নিতেও দ্বিধাবোধ করেননি।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।
১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।
১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।
১৪। ক্রুসেড’ কী?