ক্রুসেড’ কী

ক্রুসেড’ কী

অথবা, ক্রুসেড কথার অর্থ কী

অথবা, ‘ক্রুসেড’ নামকরণের কারণ কী

ক্রুসেড' কী
ক্রুসেড’ কী

(1) ক্রুসেড

জিশুখ্রিস্টের জন্মভূমি, খ্রিস্টানদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র জেরুজালেম ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক তুর্কিরা দখল করে নেয়। এই ঘটনা আধ্যাত্মিকতার শান্ত-স্নিগ্ধ পথ ছেড়ে খ্রিস্টান চার্চকে শক্তি প্রয়োগে উদ্যত করেছিল। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল জেরুজালেমকে মুসলমানদের হাত থেকে মুক্ত করা। খ্রিস্টান ধর্মের প্রধান পোপের ডাকে খ্রিস্টীয় একাদশ শতক থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত প্রায় দুশো বছরব্যাপী ইসলামবিরোধী সামরিক অভিযানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সমগ্র খ্রিস্টান জগৎ, যা ক্রুসেড (Crusade) নামে খ্যাত।

(2) ক্রুসেড কথার অর্থ

Crusade কথার অর্থ হল, ধর্মযুদ্ধ। ক্রুসেড শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Crux (ক্রাক্স) থেকে। ‘ক্রাক্স’ শব্দের অর্থ হল ক্রুশ বা ক্রস (Cross)।

(3) ক্রুসেড নামকরণের কারণ

খ্রিস্টানদের কাছে ক্রুশ বা ক্রস চিহ্ন অত্যন্ত পবিত্র। কারণ- প্রভু জিশু ক্রস আকৃতির কাঠে পেরেকবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করেছিলেন। তাই প্রভু জিশুর স্মৃতিবিজড়িত স্থান জেরুজালেম উদ্ধারের যুদ্ধে ক্রস-ই হয়ে উঠেছিল খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের প্রতীক, যা তাদের যুদ্ধে প্রেরণা দান করে।

(1) পোশাকে ও পতাকায় ‘কুশ’ চিহ্ন: রোমের পোপ দ্বিতীয় আরবান ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ক্লেরম বা ক্লেরমন্ট (Clermont) শহরে এক ধর্মসভায় পবিত্রভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের জন্য ধর্মযুদ্ধের ডাক দিয়ে রাজা থেকে সাধারণ মানুষ সকলকে আহ্বান জানান। এই ধর্মসভায় ঘোষণা করা হয় যে, ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে তাদের পোশাকের উপর পবিত্র লাল রঙের ক্রুশ বা ক্রস চিহ্ন ধারণ করতে হবে। এমতাবস্থায় ধর্মযোদ্ধারা পোশাকে ক্রস চিহ্ন এঁকে পতাকাধারী ধর্মযোদ্ধা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারা নিজেদের পতাকাতেও ব্রুস চিহ্ন ধারণ করে।

(2) কুশ’ দণ্ডের ব্যবহার: পোপের আহ্বানে সন্ন্যাসী পিটার দ্য হারমিট ক্রুসেডের প্রথম পর্যায়ে ক্রুশ দণ্ড হাতে নিয়ে জার্মানি, ইটালি ও ফ্রান্সের নানা স্থানে গিয়ে ধর্মযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছিলেন। পিটার দ্য হারমিটের নেতৃত্বেই ধর্মযোদ্ধারা জেরুজালেমে পৌঁছোয়।

সুতরাং বলা যায় যে, প্রধানত ধর্মীয় প্রয়োজনবোধ থেকেই এই ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, আর খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক চিহ্ন ক্রুশ-এর মর্যাদারক্ষার্থে যেহেতু দলে দলে মানুষ এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাই এই যুদ্ধ ক্রুসেড নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন –

১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?

২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?

৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।

৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি  কী ছিল?

৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?

৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।

৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

৯। মঠজীবনবাদ বলতে কী বোঝো?

১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।

১১। ইনভেস্টিচার দ্বন্দ্ব কী?

১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।

১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment