ক্রুসেডে কীভাবে বণিকগোষ্ঠী ও বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছিল
ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ইউরোপের বণিকমহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। বিশেষত ইতালীয় বণিকগোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ এই ধর্মযুদ্ধ দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিল। ইটালির নগররাষ্ট্রগুলি অন্তর্দেশীয় ও বহির্বাণিজ্যে খুব অগ্রণী ছিল। পোপ ধর্মযুদ্ধের ডাক দিলে জেনোয়া-সহ ইটালির নগররাষ্ট্রগুলি আশার আলো দেখতে পায়। ধর্মীয় আন্দোলনের এই সুযোগে তারা বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা করে এবং ধর্মযুদ্ধে যোগ দেয়। ধর্মীয় উন্মাদনার সাথে একীভূত হয়ে যায় বণিকদের বাণিজ্যিক স্বার্থ।
বণিকগোষ্ঠী ও বাজারের চাহিদা বৃদ্ধিতে ক্রুসেডের ভূমিকা
(1) প্রাচ্যে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ: ক্রুসেডের হাত ধরে প্রাচ্যের দেশগুলিতে ইউরোপীয় বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটে। উল্লেখ্য যে, একাদশ শতকে ক্রুসেড শুরুর আগেই ভেনিস, জেনোয়া, পিসা, অ্যামালফি প্রভৃতি বন্দরগুলি থেকে বসফরাস প্রণালী ও কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী প্রাচ্যের বন্দরগুলিতে পণ্যের লেনদেন ঘটত। কিন্তু ক্রুসেডের ফলে খ্রিস্টান জনগণের সঙ্গে প্রাচ্যের প্রত্যক্ষ সংযোগ এই বাণিজ্যে নতুন গতি নিয়ে আসে। ইটালির নগররাষ্ট্র ভেনিস ক্রুসেডার এবং তাদের খাদ্যসম্ভার প্রাচ্যের দেশগুলিতে পৌঁছে দেওয়ার পর সেখানকার বিপুল পণ্য ইউরোপে আমদানি করতে থাকে। এই দৃষ্টান্তে উদ্বুদ্ধ হয় অন্যান্য নগররাষ্ট্রের বণিককুল। তৈরি হয় বৃহদাকার জাহাজ। বাণিজ্যসূত্রে স্থাপিত হয় বহু নতুন নগর ও শহর। প্রাচ্যের দেশগুলিতে ইউরোপীয় শিল্পপণ্যের বাজার যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনই ইউরোপের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় প্রাচ্যের রেশম বস্ত্র, কার্পাস বস্ত্র, সুগন্ধি, খেজুর ইত্যাদি লোভনীয় পণ্যসম্ভার।
(2) নগরায়ণ ও বাণিজ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা: ক্রুসেড চলাকালীন প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বাণিজ্যের সূত্রে এই সময় ভেনিস, জেনোয়া, নেপলস, মার্সেই, পিসা প্রভৃতি পুরোনো নগরগুলির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। আরও নতুন নতুন নগর ও শহর গড়ে ওঠে। মিলান, ফ্লোরেন্স-সহ অনেক ইউরোপীয় শহর বাণিজ্য কেন্দ্ররূপে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে।
(3) বণিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: বণিকগোষ্ঠীগুলি ক্রুসেডের সময় নানাভাবে ধর্মযোদ্ধাদের সহায়তা করেছিল। সৈন্যদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করা থেকে শুরু করে তাদের সবরকম সাহায্য প্রদানে বণিকরা উদার হয়ে ওঠে। কারণ- ইতালীয় বণিকগোষ্ঠীগুলির লক্ষ্যই ছিল ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যে নিজেদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করা।
মূল্যায়ন
ধর্মযুদ্ধ ইউরোপের মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে এক নতুন সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। যার ফলে পরবর্তী সময়ে বণিক শ্রেণি ইউরোপের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর