ক্রুসেডের সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
অথবা,
ইউরোপের নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনধারায় ক্রুসেড কী পরিবর্তনের সূচনা করেছিল
দীর্ঘ দুশো বছরব্যাপী সংঘটিত ক্রুসেড ইউরোপকে সামগ্রিকভাবে পাল্টে দিয়েছিল, যার গভীর প্রভাব পড়েছিল ইউরোপীয় নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনেও।
ক্রুসেডের সামাজিক প্রভাব / ইউরোপের নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনধারায় পরিবর্তন
(1) মধ্যবিও শ্রেণির উদ্ভব: ক্রুসেডের সূত্রে প্রাচ্যের দেশগুলিতে ইউরোপের সম্প্রসারিত বাণিজ্য ইউরোপের সমাজে এক নতুন শ্রেণির জন্ম দেয়। বাণিজ্যের হিসাবরক্ষা, সরকারি দফতর পরিচালনা, আইনকানুন চর্চা ইত্যাদি নানা বৃত্তিধারী মানুষের আবির্ভাব জন্ম দিল C নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির। পরবর্তীকালে সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতির জগতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে, মধ্যযুগের অবসানে আধুনিক যুগের যে নতুন সূর্য ওঠে, তারই ধারক-বাহক হিসেবে বিশেষ অবদান ছিল এই নব্য সামাজিক শ্রেণির।
(2) বণিক ও মহাজন শ্রেণির প্রভাব বৃদ্ধি: ইউরোপের বণিক ও মহাজন শ্রেণির থেকে ঋণগ্রহণকারী সামন্তপ্রভুরা ক্রুসেডে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলে বা নিঃস্ব হয়ে ফিরে এলে তাদের জমিগুলি বণিক ও মহাজন শ্রেণির হাতে চলে যায়। ফলে এই শ্রেণিই পরবর্তীতে ইউরোপের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়।
(3) শ্রমিক শ্রেণির উত্থান: পোপ দ্বিতীয় আরবানের ক্লেয়ারমন্ট ধর্মসম্মেলনে ঘোষণার প্রেক্ষিতে ক্রুসেডে যোগদানকারী ভূমিদাসরা যুদ্ধশেষে স্বাধীন নাগরিক হয়ে শহরে শিল্পী বা কারিগর কিংবা উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণির শ্রমিক বা সহযোগীতে পরিণত হয়। এভাবে সমাজে একটি নতুন সামাজিক শ্রেণি হিসেবে এই ভূমিদাসরা পরিচিত হতে থাকে।
(4) নারীসমাজের মর্যাদা বৃদ্ধি: সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মযোদ্ধারা দীর্ঘদিন ঘরের বাইরে থাকার ফলে এই সকল নাইট, সামন্তপ্রভু, অভিজাত শ্রেণির জীবন-জীবিকা, ম্যানর ও জমিদারি প্রভৃতি পরিচালনার দায়িত্বভার তাদের পরিবারের নারীদের উপর এসে পড়ে। ফলে নারীরা এই সকল কাজ পরিচালনায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে এবং সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
মূল্যায়ন
সবশেষে বলা যায়, রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ক্রুসেডের সূচনা হলেও সমাজজীবনে এর বেশকিছু সদর্থক প্রভাব লক্ষ করা যায়। নাগরিক ও গ্রামীণ জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ধীরে ধীরে ইউরোপবাসীর চিন্তাচেতনার জগতকে বদলে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর