ক্রুসেডের সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ইত্যাদির মতো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ক্রুসেডের প্রভাব ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ঐতিহাসিক টয়েনবি (Toynbee)-র মতে, ক্রুসেডের ফলেই আধুনিক ইউরোপের জন্ম হয়।
ক্রুসেডের সাংস্কৃতিক প্রভাব
ইউরোপের সংস্কৃতির উপর ক্রুসেডের প্রভাব ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ-
(1) মননশীলতার চর্চা: প্রাক্-ক্রুসেড পর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ইউরোপের তুলনায় ইসলামীয় সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চায় অনেক অগ্রণী ছিল। ধর্মযুদ্ধের সূত্রে অগণিত খ্রিস্টভক্তের প্রাচ্য দেশগুলিতে যাওয়া-আসার ফলে খ্রিস্টান জগৎ আঞ্চলিক সংকীর্ণতা মুক্ত হয়। নতুন নতুন দেশ, জনগোষ্ঠী, সভ্যতা-সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসার ফলে ইউরোপীয় মনীষা ইসলামীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং সৃজনশীল সাহিত্য- সংস্কৃতির চর্চায় আত্মনিয়োগ করে।
(2) বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির প্রসার: ক্রুসেডের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে জ্ঞানের আদানপ্রদানের সূত্র ধরে এশিয়ার কাগজ, কম্পাস, আতস কাচ প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি পৌঁছোয় ইউরোপে। ফলে সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে।
(3) শিক্ষা-সাহিত্য: দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতক নাগাদ ইবন সিনা, ইবন রশিদ ও অন্যান্য আরব পণ্ডিতগণ পশ্চিম ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপনা করতে থাকেন। তাঁদের আরবি ভাষায় রচনাসমূহ ইউরোপে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। ইতিপূর্বে গ্রিক দার্শনিক প্লেটো, অ্যারিস্টটলের দর্শন আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। সেগুলিও ইউরোপে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে থাকে।
(4) ভৌগোলিক জ্ঞানের বিকাশ: ক্রুসেড চলাকালীন দীর্ঘ দুশো বছরে বহু ধর্মযোদ্ধা স্থল ও জলপথে জেরুজালেমে আসেন। ফলে ভূপ্রকৃতি, মানুষজন সম্বন্ধে তাদের স্পষ্ট ধারণা জন্মায়। এসময় ভৌগোলিক জ্ঞানবিষয়ক অনেক বই লেখা হয়। এই ভৌগোলিক জ্ঞান পরবর্তীকালে সমুদ্রযাত্রা ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের পথ নির্দেশ করে।
মূল্যায়ন
পরিশেষে বলা যায়, ক্রুসেডের যুগান্তকারী ফল ছিল ইউরোপের সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ভাবনা-চিন্তার জগতে এক আমূল পরিবর্তনের পূর্বাভাস। মার্কিন ঐতিহাসিক ও দার্শনিক উইল ডুরান্ট (Will Durant) এই ভাবজাগতিক পরিবর্তনকে নবজাগরণের আগমনের পূর্বাভাস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর