ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো
মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসে ইনভেস্টিচার দ্বন্দ্ব বা কনটেস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ৮০০ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পিটারস গির্জায় পোপ, তৃতীয় লিও শার্লাম্যানের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দিলে রাজতন্ত্রের উপর পোপতন্ত্রের কর্তৃত্ব ঘোষিত হয়। এরপর ১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে পোপ সপ্তম গ্রেগরি রোমে লেন্ট-এর সম্মেলনে কোনও অযাজক সামন্তপ্রভু কর্তৃক যাজকদের জন্য ইনভেস্টিচার অনুষ্ঠানকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করলে সম্রাট চতুর্থ হেনরির সঙ্গে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, তা ইনভেস্টিচার কনটেস্ট নামে পরিচিত।
ওয়ার্মস-এর চুক্তি
১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে যে ইনভেস্টিচার দ্বন্দ্বের সূচনা হয়েছিল, তার সমাপ্তি হয় পোপ সপ্তম গ্রেগরি ও রোমান সম্রাট চতুর্থ হেনরির মৃত্যুর পরবর্তীকালে সম্পাদিত ওয়ার্মস-এর চুক্তির মাধ্যমে। সম্রাট চতুর্থ হেনরির পুত্র সম্রাট পঞ্চম হেনরি (Henry V) তাঁর রাজত্বকালে পোপের সঙ্গে একটা মীমাংসায় আসতে চেয়েছিলেন। এই সময় পোপ দ্বিতীয় ক্যালিক্সটাস (Pope Callixtus II)-ও এই পুরোনো বিবাদ শেষ করার কথা ভাবেন। তাই ১১২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর সম্রাট পঞ্চম হেনরি ও পোপ দ্বিতীয় ক্যালিক্সটাসের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, তা ওয়ার্মস-এর চুক্তি (Concordat of Worms) নামে পরিচিত।
- চুক্তির শর্তাবলি: ওয়ার্মস-এর চুক্তির দুটি শর্ত হল- পোপ চার্চের বিশপ বা সকল কর্মচারীদের (ইটালি ও বার্গান্ডি ব্যতীত) যখন নিয়োগ করবেন, তখন সেই অনুষ্ঠানে জার্মান সম্রাট বা তাঁর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। পোপের পর সম্রাট বা তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচিত বিশপদের আংটি (Ring) ও দণ্ড (Staff) প্রদান করবেন এবং প্রথাগত ইনভেস্টিচারের পরিবর্তে রাজা বিশপদের রাজদণ্ড (Regalia) প্রদান করে Invest করবেন। এমনকি তাঁদের ভূ-সম্পত্তিও দান করবেন সম্রাট।
তাৎপর্য
এই চুক্তির তাৎপর্য নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যায়। ঐতিহাসিক জিওফ্রে ব্যারাক্ল তাঁর The Origins of Modern Germany গ্রন্থে লিখেছেন যে, চার্চ বনাম রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের সমাধান করতে পারেনি এই চুক্তি। বিশপ ও উচ্চতর যাজকদের দ্বৈত আনুগত্যের সমাধান ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া এই চুক্তিতে পোপ সম্রাটকে যেসব সুবিধা দিয়েছিলেন, সংস্কারপন্থী যাজকরা তার কঠোর সমালোচনা করেন। তবে ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও ওয়ার্মস-এর চুক্তির গুরুত্বকে অস্বীকার করা ‘যায় না। এই চুক্তির মাধ্যমেই দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর পর পোপ বনাম সম্রাটের দ্বন্দ্বের মীমাংসা সম্ভব হয়েছিল।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?