ইনকুইজিশন কী

ইনকুইজিশন কী

ইনকুইজিশন কী
ইনকুইজিশন কী

ইনকুইজিশন

প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও বিস্তার প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ক্যাথলিক চার্চ যে সংস্কার আন্দোলন শুরু করে, তা প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলন নামে পরিচিত হয়। এই আন্দোলনের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, শত্রুকে চিহ্নিত করা এবং তাকে ধ্বংস করা। স্বয়ং পোপ এসময় জেসুইটদের মতো ধর্মীয় সংগঠনের সহায়তায় প্রোটেস্ট্যান্টবাদ দমনের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। আর এই কাজে তাঁর অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল ইনকুইজিশন (Inquisition)।

(1) ইনকুইজিশনের ধারণা: ইনকুইজিশন হল একটি বিশেষ ধর্মীয় আদালত, যা স্পেনের ক্যাথলিকরা ধর্মীয় বিরোধিতার দ্রুত বিচার ও শাস্তির উদ্দেশ্যে গড়ে তুলেছিলেন। ক্যাথলিকপন্থী শাসক ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলা ১৪৭৮ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দমনের জন্য ইনকুইজিশনের ব্যবহার করেন।

(2) প্রসার: ইনকুইজিশনের প্রতিষ্ঠা স্পেনে হলেও কিছুকালের মধ্যেই তা নেদারল্যান্ড ও রোমে প্রবেশ করে। কার্ডিনাল কারাফা-র অনুরোধে তৃতীয় পল রোমে এই বিশেষ ধর্মীয় আদালত স্থাপন করেন। প্রোটেস্ট্যান্টদের সঙ্গে কোনোরকম সমঝোতা নয়, ক্যাথলিক চার্চের লক্ষ্য ছিল তাদের দমন করা। ইনকুইজিশন আদালতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মমতের বিরোধীদের চিহ্নিত করা এবং ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হত। পোপ তৃতীয় পলের আদালতেও বিচারের পূর্বে কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হত। বন্দির উপর দৈহিক নির্যাতন চালানো ছিল সাধারণ বিষয়। অনেকক্ষেত্রে আটক ব্যক্তি জানতেও পারত না যে তার অপরাধ কী। অপরাধ প্রমাণ হলে যাজকীয় শাস্তিস্বরূপ অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হত। অযাজকীয় লৌকিক কর্তৃপক্ষের হাতে দোষীকে তুলে দেওয়ার অর্থ ছিল মৃত্যুদণ্ড। যদিও এইভাবে ইনকুইজিশন নিপীড়ন ও হত্যার যন্ত্রবিশেষ হয়ে উঠেছিল। তবে প্রোটেস্ট্যান্টদের প্রভাব ক্ষুণ্ণ করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।

(3) ইনডেক্স : তথাকথিত ধর্মীয় অপরাধী ছাড়াও প্রয়োজনে বিদ্রোহাত্মক বক্তব্য সংবলিত গ্রন্থের প্রকাশনা ও নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল ইনকুইজিশনের একটি বিচার্য বিষয়। ১৫৫৯ খ্রিস্টাব্দে পোপ চতুর্থ পল ক্যাথলিক ধর্মের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ লেখক ও বইয়ের তালিকা বা ইনডেক্স (Index Librorum Prohibitorum) স্থাপন করেন। আসলে প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ধারায় ইরাসমাস, ক্যালভিন, লুথার প্রমুখ বহু প্রতিবাদী চিন্তাবিদদের রচনার উপরই নানান নিষেধাজ্ঞা বা Censorship জারি করা হয়েছিল। আর শুধু ধর্মীয় নেতৃত্বরাই নন, ক্যাথলিকদের রোষনজর থেকে কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, জিওরদানো ব্রুনো-র মতো খ্যাতনামা বিজ্ঞানী, দার্শনিকেরাও বাদ পড়েননি।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment