ইটালিতে নবজাগরণ আন্দোলনে সামাজিক শ্রেণিগুলির ভূমিকা আলোচনা করো

ইটালিতে নবজাগরণ আন্দোলনে সামাজিক শ্রেণিগুলির ভূমিকা আলোচনা করো

অথবা, রেনেসাঁর সামাজিক ভিত্তি বিষয়ে আলোচনা করো

খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে পশ্চিম ইউরোপের দশটি প্রধান নগরের মধ্যে সাতটি ছিল ইটালিতে। এর মধ্যে ফ্লোরেন্স, ভেনিস, মিলান ও নেপল্স-এর জনসংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। এরা সমবেতভাবে এমন এক নাগরিক সমাজ গড়ে তুলেছিল, যা শিক্ষা-সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সহায়ক হয়েছিল।

ইটালিতে নবজাগরণে সামাজিক শ্রেণির ভূমিকা

ইটালিতে নবজাগরণ আন্দোলনে কয়েকটি সামাজিক শ্রেণি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল-

(1) আদি-মধ্যবিত্ত শ্রেণি: উত্তর ইটালির নগরজীবনের অন্যতম ভিত্তি ছিল ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত নানারকম দলিল ও চুক্তিপত্র। এ ছাড়া নগরের জীবন-জীবিকার কেন্দ্রে ছিল বাণিজ্য ও নগর প্রশাসন। বাণিজ্যিক ও সম্পত্তি বিষয়ক চুক্তিপত্র তৈরি, আইনকানুনের ব্যাখ্যা ও পরামর্শ, চিঠিপত্র-দলিল-দস্তাবেজ লেখা ইত্যাদি কাজের প্রয়োজনে প্রাক্-নবজাগরণ যুগেই ইটালিতে এক নব্য সামাজিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল। আইনজীবী, মুহুরি, করণিক বা নোটারি (Notary) প্রভৃতি বৃত্তিতে নিযুক্ত এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল নবজাগরণ তথা মানবতাবাদী জীবনচর্চার পূর্বসূরি।

(2) আদি-বুর্জোয়া শ্রেণি: একাদশ শতক থেকে উত্তর ইটালির ব্যাবসাবাণিজ্যের অভাবনীয় প্রসার ও নগরায়ণ একটি উৎসাহী ও উদার ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর উত্থানকে সম্ভব করে তোলে। বাণিজ্যে অর্জিত মুনাফার একটা বড়ো অংশ এরা শিল্পে বিনিয়োগ করেন। তাই এদের আদি-বুর্জোয়া (Proto-Bourgeoisie) শ্রেণির প্রতিনিধি মনে করা হয়। এদের বদান্যতা ও অর্থানুকূল্যে নবজাগরণ যুগের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে।

(3) অভিজাত শ্রেণি: অভিজাত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বিভিন্ন নগররাষ্ট্রের শাসক, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী, ভূম্যধিকারী প্রমুখ। এদের একাংশ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে বুর্জোয়াদের পথ অনুসরণ করেন। তারা ব্যাবসাবাণিজ্য ও অর্থকরী অন্যান্য কাজে নিজেদের যুক্ত করেন। তারপর বুর্জোয়া ও মধ্যবিত্তদের মাঝে সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রয়োজনে এরাও শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নবজাগরণ আন্দোলনকে গতিশীল করে তোলেন।মিলানের ভিস্কান্টি বংশ (Visconti of Milan), রোমের কোলোনে (Colonna Family) এবং ওসিনি বংশ (Orsini Family) ছিল এই শ্রেণির প্রতিনিধি ।

(4) পোপতন্ত্র: নবজাগরণ ছিল মূলত একটি ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন। তথাপি পোপ এবং অন্যান্য যাজকগণ এই নব্য সাংস্কৃতিক আন্দোলন থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখতে পারেননি। পঞ্চদশ শতকে পোপ পঞ্চম মার্টিন, পঞ্চম নিকোলাস, দ্বিতীয় জুলিয়াস প্রমুখ রোমের লুপ্ত গরিমা উদ্ধারের জন্য নবজাগরণ আন্দোলনে সামিল হন। এই কারণে শিল্পচর্চার উপর খ্রিস্টীয় ধর্মভাবনার যথেষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

মূল্যায়ন

ইটালিতে নবজাগরণ কোনও একটি শ্রেণির মানুষের মাধ্যমে ঘটেনি। এই নবজাগরণের বিকাশে ইটালির নগররাষ্ট্রগুলির সর্বস্তরের মানুষ এমনকি পোপ ও যাজকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment