ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল
ইউরোপের ইতিহাসে সামন্ততন্ত্রের প্রভাব সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি -সবক্ষেত্রেই লক্ষণীয়।
সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ
সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ইউরোপীয় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায় কয়েকটি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছিল-
(1) জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা: সামন্তপ্রভুরা দুর্গনির্মাণ, প্রাচীর নির্মাণ, গভীর পরিখা খনন ও সেনাবাহিনী গঠনের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি বহিরাগতদের আক্রমণকেও প্রতিহত করেছিল।
(2) বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতা: সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোতে আঞ্চলিক শাসকেরা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। ফলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে।
(3) স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির উদ্ভব: আলোচ্য পর্বে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণে ইউরোপের শিল্প ও বাণিজ্য ধ্বংস হলে সামন্তপ্রভুদের উদ্যোগে ম্যানরকেন্দ্রিক এক স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির জন্ম হয়েছিল, যা ইউরোপকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।
(4) উৎপাদন ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখা: ইউরোপের উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখার উদ্দেশ্যে এই পর্বে সামন্তপ্রভুরা উদ্যোগী হয়েছিলেন। মূলত তাঁদের প্রচেষ্টাতেই ম্যানরকে কেন্দ্র করে ভ্যাসাল ও সার্ফদের সাহায্যে ম্যানরের প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভবপর হয়।
(5) শিভালরির আদর্শ প্রচার: মধ্যযুগে বর্বর জাতিগুলির আক্রমণে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে ন্যায় ও নীতিবোধ যখন ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, সেই সময় সামন্তপ্রভুদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নাইট বাহিনী শিভালরির আদর্শ মেনে নীতিবোধ প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করেছিল। ফলে মধ্যযুগীয় ইউরোপে নারী ও শিশুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ভদ্রতা, শরণাগতকে রক্ষা করার মতো গুণগুলি টিকে ছিল।
(6) শান্তি প্রতিষ্ঠা: অষ্টম শতকে বিভিন্ন বহিরাগত জাতিগুলির আক্রমণে ইউরোপের শান্তি-শৃঙ্খলা যখন ভেঙে পড়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে সামন্ততন্ত্র শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল।
(7) শিক্ষার প্রসার: পশ্চিম ইউরোপের সনাতনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সংকটের সম্মুখীন হয়। এই পরিস্থিতিতে সামন্তপ্রভুদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা চার্চগুলি সমগ্র মধ্যযুগে জ্ঞানের আলো প্রজ্বলিত করে রেখেছিল।
আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর