ইউরোপীয় রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো

ইউরোপীয় রেনেসাঁর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো

অথবা, রেনেসাঁ বা নবজাগরণের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো

রেনেসাঁ বা নবজাগরণ

মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও অধবিশ্বাস দূর করে অতীতের জ্ঞানের আলোয় ইউরোপকে উদ্ভাসিত করে তোলার যে প্রচেষ্টা পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, তাকেই রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বলা হয়। নবজাগরণের ফলে ধ্রুপদি গ্রিক ও রোমান শিল্প, সাহিত্য ও দর্শনের চর্চা শুরু হয়।

রেনেসাঁ বা নবজাগরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ

নবজাগরণের একাধিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যেমন-

(1) যুক্তিবাদ: নবজাগরণ জন্ম দিয়েছিল যুক্তিবাদের। এই যুক্তিবাদের বিকাশই মানুষকে মধ্যযুগীয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে সমস্ত কিছুকে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিচারবিবেচনা করে গ্রহণ করতে শেখায়।

(2) মানবতাবাদ: নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদ। মানবতাবাদে পারলৌকিক চিন্তায় গুরুত্ব না দিয়ে এই জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য, ভালোবাসা ও আনন্দলাভের কথা প্রচার করা হয়।

(3) প্রাচীন শিক্ষা-সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার: নবজাগরণের ফলে প্রাচীন শিক্ষা-সংস্কৃতি পুনরায় চর্চার আলোয় আসে। মানুষ উপলব্ধি করে যে, প্রাচীন গ্রিস ও রোমে মানুষ ছিল স্বাধীন। তারা যুক্তিবুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হত। মধ্যযুগে প্রাকৃতিক জগৎ ও সৌন্দর্য সম্পর্কে চিন্তা ছিল ধর্মবিরুদ্ধ। নবজাগরণ এই ধারণায় পরিবর্তন আনে।

(4) অনুসন্ধিৎসা: নবজাগরণ মানুষের মনে অনুসন্ধিৎসার জন্ম দেয়। ফলে অজানাকে জানার ও অদেখাকে দেখার আগ্রহ তৈরি হয়। শুরু হয় ভৌগোলিক অভিযানের প্রয়াস।

(5) ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা রেনেসাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রেনেসাঁ ধর্মকে অস্বীকার করেনি কিন্তু মানুষকে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার মুক্ত করেছিল। মধ্যযুগে মানুষ পরলোকে সুখভোগের স্বপ্ন দেখত। নবজাগরণের ফলে মানুষ ইহজগতে ধর্মনিরপেক্ষ জীবনযাপনের নতুন পথ খুঁজে পায়, উপলব্ধি করে যে, দৈব বা অলৌকিক কোনও শক্তি নয়, সে নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা।

(6) দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি: নবজাগরণ একদিনে ঘটেনি অর্থাৎ এটি কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে সুদীর্ঘ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে নবজাগরণ নিজরূপ ধারণ করেছিল।

(7) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা: রেনেসাঁর অপর বৈশিষ্ট্য হল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা। ইতালীয় পণ্ডিত মিরানদোলা (Mirandola) বলেছেন যে, ঈশ্বরের তৈরি পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র নিজের ইচ্ছায় তার জীবনকে গড়ে তুলতে পারে। জ্ঞানার্জন, তার অনুশীলন ও আত্মসমীক্ষার দ্বারা মানুষ জীবনে সফলতা লাভ এবং নিজ স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করে।

(8) বিজ্ঞানচেতনা: রেনেসাঁ যুগে মানুষের মনে যুক্তিবাদ ও অনুসন্ধিৎসার ফলে জন্ম নেয় বিজ্ঞানচেতনার। এই সময় থেকেই বিজ্ঞানচর্চার অগ্রগতি ঘটতে থাকে, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment