ইংল্যান্ডের সাহিত্যচর্চায় মানবতাবাদী ভাবধারার পরিচয় দাও

ইংল্যান্ডের সাহিত্যচর্চায় মানবতাবাদী ভাবধারার পরিচয় দাও

অথবা, ইংল্যান্ডের চিন্তাজগতে নবজাগরণের কী ধরনের প্রভাব পড়েছিল

ইটালি ও ইংল্যান্ডের মনীষীদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও ভাববিনিময়ের মাধ্যমে নবজাগরণের চেতনা সমগ্র ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে এই ভাবধারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

ইংল্যান্ডের সাহিত্যচর্চায় মানবতাবাদী ভাবধারার পরিচয় 

ইংল্যান্ডের সাহিত্যচর্চায় মানবতাবাদী ভাবধারার পরিচয় প্রদানে কয়েকজন বিশিষ্ট সাহিত্যিকের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন।

(1) উইলিয়ম ল্যাংল্যান্ড: ইংরেজি ভাষায় মানবতাবাদী ও জীবনমুখী সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে উইলিয়ম ল্যাংল্যান্ড (William Langland, ১৩৩২-১৩৮৬ খ্রি.)-এর নাম সর্বাগ্রে স্মরণ করা হয়ে থাকে। পিয়ার্স প্লউম্যান (Piers Plowman) নামক কবিতা রচনা করে তিনি সাড়া ফেলে দেন। এই কবিতায় তিনিই সর্বপ্রথম সর্বহারা কৃষক শ্রেণির সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরেন। ল্যাংল্যান্ড সামন্ততন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করে কৃষক শ্রেণির মুক্তির আভাস দেন।

(2)  জিওফ্রে চসার: ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মানবতাবাদী কবি ছিলেন জিওফ্রে চসার (Geoffrey Chaucer, ১৩৪৩ ১৪০০ খ্রি.)। তিনি বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে মধ্যযুগের ভ্রান্তি ও পাপাচারকে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। তাঁর একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হল, দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস (The Canterbury Tales)। মানুষে মানুষে বিভিন্নতার কারণে যে বৈচিত্র্য, সেই বৈচিত্র্যই হল জীবনের আনন্দসুধা-এই সত্যকে চসার প্রতিষ্ঠিত করেন। ইংরেজি সাহিত্যে অবদানের জন্য  তাঁকে ইংরেজি কাব্যের জনক (Father of English Literature) বলা হয়।

(3) টমাস মোর: টমাস মোর (Thomas More, ১৪৭৮-১৫৩৫ খ্রি.) ছিলেন নবজাগরণ পর্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানবতাবাদী পণ্ডিত। ল্যাটিন ভাষায় রচিত তাঁর সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক বহুচর্চিত গ্রন্থের নাম ইউটোপিয়া (Utopia)। এখানে তিনি এমন এক সমাজের ছবি এঁকেছেন, যেখানে আর্থসামাজিক সাম্য, ন্যায়বিচার, সর্বজনীন শান্তি ও সুখ সদা বিরাজমান। তাঁর এই কল্পনা অবাস্তব বলে সমালোচিত হলেও, এটিকেই সমাজতন্ত্রবাদ দর্শনতত্ত্বের আদি প্রয়াস বলে গণ্য করা হয়।

(4) এডমন্ড স্পেনসার: আধুনিক ইংরেজি কাব্যের স্রষ্টা নামে পরিচিত কবি এডমন্ড স্পেনসার (Edmund Spenser, ১৫৫২/৫৩ ১৫৯৯ খ্রি.) ইংল্যান্ডের নবজাগরণের এক অন্যতম উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তাঁর বিখ্যাত সৃষ্টি হল, দ্য ফেয়ারি কুইন (The Faerie Queene) কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যে তিনি রূপকের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের টিউডর (Tudor) বংশ এবং মহারানি প্রথম এলিজাবেথ-এর জীবনকাহিনি সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন।

(5) ফ্রান্সিস বেকন: ইংল্যান্ডে মানবতাবাদের প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নেন প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক, আইনজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ স্যার ফ্রান্সিস বেকন (Francis Bacon, ১৫৬১ ১৬২৬ খ্রি.)। তাঁর রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-নোভাম অর্গানাম (Novum Organum), দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ লার্নিং (The Advancement of Learning) ইত্যাদি। তিনি ইংরেজি দর্শনের আদিগুরু নামেও পরিচিত।

(6) উইলিয়ম শেকস্পিয়য়: ষোড়শ শতকের ইংল্যান্ডের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কবি ও নাট্যকার ছিলেন উইলিয়ম শেকস্পিয়র (William Shakespeare, ১৫৬৪-১৬১৬ খ্রি.)। বস্তুতপক্ষে তাঁর হাতেই ইংরেজি সাহিত্য তার চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। শেকস্পিয়র রচিত হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, ওথেলো ইত্যাদি কেবল ইংরেজিই নয় সমগ্র বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

(7) জন কোলেট: রেনেসাঁ পর্বে অপর গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজ পণ্ডিত ও শিক্ষার অগ্রদূত তথা খ্রিস্টান মানবতাবাদী জন কোলেট (John Colet, ১৪৬৭ – ১৫১৯ খ্রি.) ছিলেন ইরাসমাসের বন্ধু। তিনি খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বকে কুসংস্কারমুক্ত করে মানবতাবাদের সঙ্গে যুক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment