আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রজার বেকন-এর অবদান আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রজার বেকন-এর অবদান আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রজার বেকন-এর অবদান আলোচনা করো
আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রজার বেকন-এর অবদান আলোচনা করো

আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় রজার বেকন-এর অবদান 

নবজাগরণ পর্বে বিজ্ঞানচর্চার অগ্রগতিতে যেসকল বিজ্ঞানী বিশেষ অবদান রেখেছিলেন, তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রজার বেকন (Roger Bacon, ১২১৯/২০ – ১২৯২ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক নামে সুপরিচিত।

(1) সংক্ষিপ্ত পরিচয়: ত্রয়োদশ শতকের প্রথমার্ধে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন রজার বেকন। যতদূর জানা যায়, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পরবর্তীকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যাপনার সুযোগ পান। আনুমানিক ১২৩৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তাঁকে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বেকন সেখানে ল্যাটিন গ্রামার, অ্যারিস্টটলীয়ান লজিক, পাটিগণিত, জ্যামিতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় পড়াতেন। তিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও শিক্ষাসংস্কারক।

(2) চিন্তাধারা: রজার বেকন ছিলেন স্কলাস্টিসিজম (Scholasticism)-এর অনুসারী। তিনি মনে করতেন যে, একমাত্র পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞানলাভ করা সম্ভব।

(3) বিজ্ঞানে অবদান: রজার বেকন দৃষ্টিবিজ্ঞানের উপর বিশেষ গবেষণা চালান। তাঁর এই গবেষণার সূত্র ধরেই পরবর্তীকালে চশমা, অনুবীক্ষণ ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। ইউরোপে সম্ভবত তিনিই প্রথম বারুদের ফর্মুলা লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর লেখাতে Firecracker বা আগ্নেয়াস্ত্রের বর্ণনাও পাওয়া যায়। এ ছাড়া তিনি পালবিহীন জাহাজের অস্তিত্ব কল্পনা করতেও সক্ষম হন। তাঁর লেখা ওপাস মাজুস (Opus Majus) গ্রন্থটিতে গণিতশাস্ত্র, আলোকবিদ্যা (Optics), জ্যোতির্বিজ্ঞান-সহ বিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে বিবিধ তথ্য পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি অপরসায়ন ও ভূবিদ্যাতেও রজার বেকনের অবদান ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রজার বেকন উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিমান, যন্ত্রচালিত জাহাজ, গাড়ি প্রভৃতি তৈরি করা সম্ভব। তিনি Opus minus ও Opus Tertium নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন বলেও জানা যায়।

(4) পরিণতি: রজার বেকনের যুগান্তকারী আবিষ্কার সেইসঙ্গে চার্চের দুর্নীতির প্রতিবাদ করার জন্য, অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেন। পরিণামে তাঁকে ১৪ বছরের জন্য কারাবরণ করতে হয়। জেল থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অক্সফোর্ড-এ পুনরায় গবেষণা শুরু করলেও, তা খুব বেশি এগোতে পারেনি। শেষপর্যন্ত আনুমানিক ১২৯২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সর্বদাই রজার বেকনের অবদান চিরস্মরণীয়। গণিতশাস্ত্র, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, যন্ত্রবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি নানান শাস্ত্রে বিস্ময়কর দক্ষতার অধিকারী ছিলেন। সেই কারণে তিনি বিস্ময়কর ডাক্তার (Doctor Mirabillies) নামে পরিচিত হন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment