‘অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী’ কারা? অ্যানাব্যাপটিস্ট বা উগ্রবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

‘অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী’ কারা? অ্যানাব্যাপটিস্ট বা উগ্রবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

'অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী' কারা? অ্যানাব্যাপটিস্ট বা উগ্রবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো
‘অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী’ কারা? অ্যানাব্যাপটিস্ট বা উগ্রবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো

অ্যানাব্যাপটিস্ট গোষ্ঠী

মার্টিন লুথারের প্রতিবাদী ধর্মসংস্কার আন্দোলন কালক্রমে আরও বেশি উগ্রবাদী রূপ নেয়। তাঁরই অনুগামীরা লুথারকৃত সংস্কার আন্দোলনকে বৃহত্তর ব্যঞ্জনা দেন এবং লুথারের উপলব্ধিকে অধিকতর উগ্ররূপে উপস্থাপন করেন। আন্দ্রেয়াস ভন কার্লস্টাড, টমাস মুনজের, কনরাড গ্রেবেল, জ্যাকব হুটার প্রমুখের নেতৃত্বে সংগঠিত এই আন্দোলন উগ্রবাদী ধর্মসংস্কার (Radical Reformation) নামে অভিহিত হয়। লুথার ধর্মীয় আচারের মধ্যে দীক্ষিতকরণ বা Baptism-কে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু উগ্রবাদীরা ব্যাপটিজম অনুষ্ঠানেরও বিরোধী ছিলেন। তাই এঁদের অ্যানাব্যাপটিস্ট (Anabaptist)-ও বলা হয়।

চিন্তাধারা

অ্যানাব্যাপটিস্টরা সামাজিক বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁরা মনে করতেন যে, ধর্মীয় সংগঠনে কোনও রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থাকবে না। বিবেকের স্বাধীনতা, সৌভ্রাতৃত্ব এবং মানবিকতার নীতিতে অ্যানাব্যাপটিস্টগণ বিশ্বাসী ছিলেন। বস্তুত, ধর্মসংস্কার আন্দোলনের জঠর থেকেই চরমপন্থী অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের জন্ম হয়েছে। এই আন্দোলনকে চতুর্থ রিফরমেশন বা কো-রিফরমেশনও বলা হয়।

মূল কেন্দ্রসমূহ

সুইটজারল্যান্ড, টাইরল, হল্যান্ড, উত্তর জার্মানি, হাঙ্গেরি ইত্যাদি ছিল ইউরোপে অ্যানাব্যাপটিস্টদের প্রধান প্রধান কেন্দ্র।

অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের কারণসমূহ

ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের যুগে যে-সমস্ত ধর্মীয় চরমপন্থী বা উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অ্যানাব্যাপটিস্টগণ। অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলনের উত্থানের পিছনে একাধিক কারণ সক্রিয় ছিল। যথা-

(1) মানসিকতা: ইংল্যান্ডে জন ওয়াইক্লিফ, বোহেমিয়ায় জন হাস, হল্যান্ডে ইরাসমাস, জার্মানিতে মার্টিন লুথার পোপ ও চার্চতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন, তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র ইউরোপে। ধর্মসংস্কারকদের বক্তব্য যে যুক্তিসম্মত, এই বোধ ইউরোপের মানুষদের মধ্যে আন্দোলনমুখী এক মানসিকতা গঠনে সাহায্য করেছিল।

(2)  ধর্মীয় কারণ: আলোচ্য পর্বে পোপ ও চার্চের অধিকাংশ নির্দেশই বাইবেল দ্বারা অনুমোদিত ছিল না। তাই যুক্তির আলোকে ধর্মীয় প্রথা বা অনুষ্ঠানগুলি পরিচালনার দাবি ওঠে।

(3) আর্থসামাজিক কারণ: এই সময় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার নিষ্পেষণে জর্জরিত মেহনতি শ্রেণিকে অবদমিত করে রাখার জন্য চার্চ তাদের ধর্মীয় বাণী শোনাত এবং এই দুরবস্থাকে ভাগ্য ও বিধির বিধান বলে ব্যাখ্যা করত। কিন্তু এই নিপীড়িত শ্রেণি তাদের দুঃখকষ্টের প্রকৃত কারণ উপলব্ধি করে এবং সংস্কার আন্দোলনকে শোষণমুক্ত আন্দোলন মনে করে যোগদান করে। এইসব কারণের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫২১-২২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির – উইটেনবার্গ শহরে কার্লস্টাডের নেতৃত্বে অ্যানাব্যাপটিস্ট আন্দোলন সূচিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment