অছিবাদের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করো
অছিবাদের উৎস
গান্ধিজির রাজনৈতিক চিন্তায় অছিবাদ এর ধারনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ইংরেজি আইনের ন্যায়তত্ত্ব বা theory of equality তাঁকে অনুপ্রেরনা দিয়েছিল। ইংল্যান্ডে ওকালতি পড়াকালীন গান্ধিজি এই ধারণা প্রদান করেন যে, অন্যের সম্পত্তি কখনোই ভোগদখল করা উচিত নয় বরং ত্যাগের মাধ্যমে সম্পদ ভোগ অধিক শ্রেয়।
[1] পশ্চিমি তাত্ত্বিকদের প্রভাব: গান্ধিজি জন রাস্কিন এবং লিও টলস্টয় এর মতো পশ্চিমি চিন্তাবিদদের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তারা সম্পদের নৈতিক ব্যবহারের সমর্থক ছিলেন।
[2] গোপালকৃষ্ণ গোখলের প্রভাব: অছিবাদ সম্পর্কে গোপাল কৃষ্ণ গোলের মতাদর্শ গান্ধিজিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। গান্ধিজির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি ধনীদের জাতীয় দায়িত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন।
[3] ঈশোপনিষদের প্রভাব: অছিতত্ত্ব কোনো নতুন ধারণা নয়, প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ ঈশোপনিষদের একটি বিখ্যাত শ্লোকে এর পরিচিতি পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে-ঈশ্বর এই বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন, তাই প্রথমে সম্পদের ভোগদখল ছাড়তে শেখো কারণ তার ফলেই বেশি উপভোগ করা সম্ভব। পরবর্তীকালে তিনি অপরিগ্রহ (সম্পত্তি বর্জন) ও সমভাবের (সবাইকে সমজ্ঞান করার) আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন।
[4] গীতার প্রভাব: তিনি অছিতত্ত্বের মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থাপনা করতে চেয়েছিলেন। গীতার সারমর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, “যদি আমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধনসম্পদ সঞ্চয় করে রাখি, তাহলে আমিও একপ্রকার চোর।”
গান্ধিজি মূলত শ্রেণিবিরোধমূলক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সেটিকে প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে, হিংসা বা বলপ্রয়োগ করলে ধনীদের সম্পদ হয়তো কেড়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু তাদের বিবেকের পরিবর্তন ঘটবে না। ফলে তারা সহৃদয় হবেন না, উপরন্তু হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করবে।
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গান্ধিজির ঘনিষ্ঠ বন্ধুস্থানীয় প্যারীলাল-এর রচিত একটি প্রবন্ধে অছিব্যবস্থা সম্পর্কে একটি সুসংহত ধারণা পাওয়া যায়। গান্ধিজি সম্পত্তির রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক মালিকানাতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি বলেন যে, যদিও ব্যক্তিমালিকানার চেয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা উৎকৃষ্ট তবে সেটাও গ্রহণীয় নয় কারণ রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিতরূপে হিংসা বলপ্রয়োগ করতে পারে (The state represents violence in a concentrated and organised form)।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর