অছিবাদী তত্ত্বের বিরুদ্ধে সমালোচনাগুলি আলোচনা করো
অছিবাদের সমালোচনাসমূহ
গান্ধিজির অছিবাদ সমাজে ন্যায় ও সমতা স্থাপনের উপযোগী তত্ত্ব হলেও তত্ত্বটি নানা দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। সমালোচনাগুলি হল-
[1] অবাস্তব তত্ত্ব: অছিবাদ একটি অবাস্তব ধারণা। বাস্তবে কোনো ব্যক্তিই নিজের অতিরিক্ত সম্পদ সর্বসাধারণের স্বার্থে দান করবে না। এই তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
[2] অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব: গান্ধিজির এই তত্ত্ব মার্কসবাদীদের দ্বারাও সমালোচিত হয়েছে। গান্ধিজি সাম্যবাদী সমাজের কথা বললেও উৎপাদনের উপকরণের ব্যক্তিগত মালিকানার বিলোপসাধনের কথা তিনি বলেননি। অছি বা অভিভাবক হিসেবে পুঁজিপতিদের হাতেই সম্পদের মালিকানা থাকবে। তারা সামাজিক কল্যাণের স্বার্থে তা সকলের জন্য ব্যয় করবে, যা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।
[3] রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক: গণতান্ত্রিক সমাজবাদের মতে, ব্যক্তি ও সামাজিক সম্পদের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। কিন্তু অছিবাদ এর সমর্থন করে না। এমনকি জওহরলাল নেহরু নিজেই অছিবাদকে সমর্থন করতে পারেননি।
[4] মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ: অনেকের মতে, অছিবাদে অন্যের দয়ার উপর সাধারণ মানুষের জীবনধারণের কথা বলা হয়েছে। ফলে এই নীতি মানুষের মর্যাদা রক্ষা করতে অসমর্থ হয়েছে।
[5] শ্রৈণিবৈষম্য: অছিবাদে মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণিবৈষম্যকে দূর করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা অবাস্তব।
[6] বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা : অছিবাদ সমাজের অন্তর্নিহিত কাঠামোগত সমস্যাগুলির সমাধান করে না, যা অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকে পরিচালিত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসম প্রবেশাধিকার।
[7] বর্তমান সমাজে অপ্রাসঙ্গিক: ঔপনিবেশিক ভারতের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজি অছিবাদের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছিলেন। সমালোচকদের মতে, ঔপনিবেশিক ভারতের আর্থ- সামাজিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটি প্রাসঙ্গিক হলেও বর্তমান সমাজের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণরূপে অপ্রাসঙ্গিক।
[8] সম্পদ বৃদ্ধি : সমালোচকদের মতে, অছিবাদ সমাজের পুঁজিবাদী শ্রেণিকে সামাজিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পরামর্শ দেয় যা তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
[9] কাল্পনিক ধারণা: এই ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজিকে কল্পবাদী চিন্তাবিদ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে বলে সমালোচকেরা মনে করেছেন। তারা গান্ধিজিকে সাঁ সিমোঁ, রবার্ট ওয়েন প্রমুখ কল্পবাদী চিন্তাবিদদের সাথে তুলনা করেছিলেন।
[10] সম্পদের বণ্টনগত সমস্যা: সমালোচকদের মতে, অছিবাদে অতিরিক্ত সম্পদের বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই বণ্টনের বিষয়ে মাথাপিছু কোনো মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
পরিশেষে বলা যায়, গান্ধিজির অছিবাদ বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হলেও এর মানবিক ও নৈতিক গুরুত্বকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। ভারতবর্ষের চিত্রপটে যে শ্রেণিবিরোধের মতো সমস্যা রয়েছে তা কিন্তু এই তত্ত্বে পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর